Your cart is currently empty!

আলুর ঢলে পড়া রোগ: কারণ, লক্ষণ, প্রতিকার ও করণীয়
আলুর ঢলে পড়া রোগ: কারণ, লক্ষণ, প্রতিকার ও করণীয়
রোগের পরিচিতি ও কারণ
আলুর ঢলে পড়া রোগ (Bacterial wilt) আলুর একটি মারাত্মক সমস্যা, যা Ralstonia solanacearum এবং Erwinia নামক ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সৃষ্ট। এছাড়া, ফিউজারিয়াম নামক ছত্রাকও এই রোগের কারণ হতে পারে।
রোগের লক্ষণসমূহ
১. গাছ সবুজ অবস্থাতেই হঠাৎ ঢলে পড়ে।
২. আলু গাছের যে কোনো বয়সে এই রোগ দেখা যেতে পারে।
৩. গাছের একটি শাখা বা একাংশও আক্রান্ত হতে পারে।
৪. কান্ডের নিম্নাংশ ও শিকড় অক্ষত থাকে।
৫. কান্ড চিরলে পরিবহন কলায় বাদামী রঙ দেখা যায়।
৬. আক্রান্ত গাছের কান্ড কেটে পানিতে রাখলে সাদা দুধের মতো তরল নির্গত হয়।
৭. সংগৃহীত আলুর চোখে সাদা পুঁজ দেখা যায় এবং দ্রুত পচন ধরে।
৮. বীজ আলুতে এ রোগ দেখা গেলে তা কখনোই পুনরায় বীজ হিসাবে ব্যবহার করা যাবে না।
রোগের অনুকূল আবহাওয়া
১. তাপমাত্রা: ২৮°-৩০° সেলসিয়াস এ রোগের জন্য সবচেয়ে উপযোগী।
২. আপেক্ষিক আর্দ্রতা: ৮০-৯০%।
৩. কম তাপমাত্রায় জীবাণু মাটিতে সুপ্ত অবস্থায় থাকতে পারে।
রোগের বিস্তার
১. মাটিতে, আক্রান্ত আলুতে এবং ফসলের পরিত্যক্ত অংশে জীবাণু বেঁচে থাকে।
২. বৃষ্টি, সেচের পানি, কৃষি যন্ত্রপাতি, এবং কৃষকের পায়ের মাটি দিয়ে বিস্তার ঘটে।
৩. মাটিতে ৩০-৭৫ সেমি গভীরতায় জীবাণু দীর্ঘদিন টিকে থাকতে পারে।
আগাম করণীয
১. রোগমুক্ত বীজ ব্যবহার নিশ্চিত করুন।
২. জমিতে ডলোচুন (শতকে ৪ কেজি) ও ব্লিচিং পাউডার (১০০ গ্রাম) প্রয়োগ করুন।
৩. প্রত্যায়িত ও সুস্থ বীজ সংগ্রহ করুন।
৪. কাটা বীজ লাগানো এড়িয়ে চলুন।
৫. স্যাঁতসেঁতে জমিতে আলু চাষ করবেন না।
৬. জমিতে পূর্ববর্তী ধানের নাড়া শুকিয়ে পুড়িয়ে ফেলুন।
৭. টমেটো, বেগুন, মরিচ, তামাক জাতীয় ফসলের চাষ এড়িয়ে চলুন।
রোগ হলে করণীয়
১. আক্রান্ত গাছ তুলে পুড়িয়ে বা মাটিতে পুতে ফেলুন।
২. ঢলে পড়া অবস্থায় সেচ প্রয়োগ করবেন না।
৩. সেচ দিলে বালাইনাশক মিশ্রিত পানি ব্যবহার করুন।
৪. গাছের গোড়ায় মাটি তুলে দিন।
5. আক্রান্ত জায়গায় ব্লিচিং পাউডার প্রয়োগ করুন।
৬. আক্রান্ত জমিতে পরবর্তী মৌসুমে আলু বা এ জাতীয় ফসল চাষ করবেন না।
৭. ভুট্টা দিয়ে আন্তঃফসল চাষ করলে জীবাণু সংক্রমণ কম হয়।
৮. গ্রীষ্মকালে জমি চাষ করে প্রখর রোদে শুকিয়ে নিন।
বালাইনাশক প্রয়োগ পদ্ধতি
ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধী বালাইনাশক
১. বায়ো এলিন: ১ মিলি/লিটার পানিতে।
২. টিমসেন: ১ গ্রাম/লিটার পানিতে।
৩. বাহা৭২এসপি: ০.৫ গ্রাম/লিটার পানিতে।
৪. প্লান্টোমাইসিন: ০.৫ গ্রাম/লিটার পানিতে।
৫. ব্যাকট্রোবান, ব্যাকট্রল, অটোব্যাক: ২ গ্রাম/লিটার পানিতে।
কপার গ্রুপের বালাইনাশক
১. কাসুগার: ১ গ্রাম/লিটার পানিতে।
২. কপার ব্লু: ২ গ্রাম/লিটার পানিতে।
৩. ব্লিটক্স: ২ গ্রাম/লিটার পানিতে।
মিশ্রণ পদ্ধতি
কার্বেন্ডাজিম গ্রুপের ছত্রাকনাশক (যেমন নোইন বা বেন্ডাজিম) মিশিয়ে ৫ দিন পরপর ২ বার স্প্রে করলে ভালো ফল পাওয়া যায়।
বিশেষ সতর্কতা
- রোগ দেখা দিলে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করুন।
- সঠিক মাত্রায় ও নিয়মিত বালাইনাশক প্রয়োগ করুন।
- আক্রান্ত জমিতে ভবিষ্যতে আলু চাষ এড়িয়ে চলুন।
সঠিক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করে ঢলে পড়া রোগ প্রতিরোধ করুন এবং আপনার আলু চাষে লাভবান হোন।

আলুর ঢলে পড়া রোগ: কারণ, লক্ষণ, প্রতিকার ও করণীয়
আলুর ঢলে পড়া রোগ: কারণ, লক্ষণ, প্রতিকার ও করণীয়
রোগের পরিচিতি ও কারণ
আলুর ঢলে পড়া রোগ (Bacterial wilt) আলুর একটি মারাত্মক সমস্যা, যা Ralstonia solanacearum এবং Erwinia নামক ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সৃষ্ট। এছাড়া, ফিউজারিয়াম নামক ছত্রাকও এই রোগের কারণ হতে পারে।
রোগের লক্ষণসমূহ
১. গাছ সবুজ অবস্থাতেই হঠাৎ ঢলে পড়ে।
২. আলু গাছের যে কোনো বয়সে এই রোগ দেখা যেতে পারে।
৩. গাছের একটি শাখা বা একাংশও আক্রান্ত হতে পারে।
৪. কান্ডের নিম্নাংশ ও শিকড় অক্ষত থাকে।
৫. কান্ড চিরলে পরিবহন কলায় বাদামী রঙ দেখা যায়।
৬. আক্রান্ত গাছের কান্ড কেটে পানিতে রাখলে সাদা দুধের মতো তরল নির্গত হয়।
৭. সংগৃহীত আলুর চোখে সাদা পুঁজ দেখা যায় এবং দ্রুত পচন ধরে।
৮. বীজ আলুতে এ রোগ দেখা গেলে তা কখনোই পুনরায় বীজ হিসাবে ব্যবহার করা যাবে না।
রোগের অনুকূল আবহাওয়া
১. তাপমাত্রা: ২৮°-৩০° সেলসিয়াস এ রোগের জন্য সবচেয়ে উপযোগী।
২. আপেক্ষিক আর্দ্রতা: ৮০-৯০%।
৩. কম তাপমাত্রায় জীবাণু মাটিতে সুপ্ত অবস্থায় থাকতে পারে।
রোগের বিস্তার
১. মাটিতে, আক্রান্ত আলুতে এবং ফসলের পরিত্যক্ত অংশে জীবাণু বেঁচে থাকে।
২. বৃষ্টি, সেচের পানি, কৃষি যন্ত্রপাতি, এবং কৃষকের পায়ের মাটি দিয়ে বিস্তার ঘটে।
৩. মাটিতে ৩০-৭৫ সেমি গভীরতায় জীবাণু দীর্ঘদিন টিকে থাকতে পারে।
আগাম করণীয
১. রোগমুক্ত বীজ ব্যবহার নিশ্চিত করুন।
২. জমিতে ডলোচুন (শতকে ৪ কেজি) ও ব্লিচিং পাউডার (১০০ গ্রাম) প্রয়োগ করুন।
৩. প্রত্যায়িত ও সুস্থ বীজ সংগ্রহ করুন।
৪. কাটা বীজ লাগানো এড়িয়ে চলুন।
৫. স্যাঁতসেঁতে জমিতে আলু চাষ করবেন না।
৬. জমিতে পূর্ববর্তী ধানের নাড়া শুকিয়ে পুড়িয়ে ফেলুন।
৭. টমেটো, বেগুন, মরিচ, তামাক জাতীয় ফসলের চাষ এড়িয়ে চলুন।
রোগ হলে করণীয়
১. আক্রান্ত গাছ তুলে পুড়িয়ে বা মাটিতে পুতে ফেলুন।
২. ঢলে পড়া অবস্থায় সেচ প্রয়োগ করবেন না।
৩. সেচ দিলে বালাইনাশক মিশ্রিত পানি ব্যবহার করুন।
৪. গাছের গোড়ায় মাটি তুলে দিন।
5. আক্রান্ত জায়গায় ব্লিচিং পাউডার প্রয়োগ করুন।
৬. আক্রান্ত জমিতে পরবর্তী মৌসুমে আলু বা এ জাতীয় ফসল চাষ করবেন না।
৭. ভুট্টা দিয়ে আন্তঃফসল চাষ করলে জীবাণু সংক্রমণ কম হয়।
৮. গ্রীষ্মকালে জমি চাষ করে প্রখর রোদে শুকিয়ে নিন।
বালাইনাশক প্রয়োগ পদ্ধতি
ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধী বালাইনাশক
১. বায়ো এলিন: ১ মিলি/লিটার পানিতে।
২. টিমসেন: ১ গ্রাম/লিটার পানিতে।
৩. বাহা৭২এসপি: ০.৫ গ্রাম/লিটার পানিতে।
৪. প্লান্টোমাইসিন: ০.৫ গ্রাম/লিটার পানিতে।
৫. ব্যাকট্রোবান, ব্যাকট্রল, অটোব্যাক: ২ গ্রাম/লিটার পানিতে।
কপার গ্রুপের বালাইনাশক
১. কাসুগার: ১ গ্রাম/লিটার পানিতে।
২. কপার ব্লু: ২ গ্রাম/লিটার পানিতে।
৩. ব্লিটক্স: ২ গ্রাম/লিটার পানিতে।
মিশ্রণ পদ্ধতি
কার্বেন্ডাজিম গ্রুপের ছত্রাকনাশক (যেমন নোইন বা বেন্ডাজিম) মিশিয়ে ৫ দিন পরপর ২ বার স্প্রে করলে ভালো ফল পাওয়া যায়।
বিশেষ সতর্কতা
- রোগ দেখা দিলে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করুন।
- সঠিক মাত্রায় ও নিয়মিত বালাইনাশক প্রয়োগ করুন।
- আক্রান্ত জমিতে ভবিষ্যতে আলু চাষ এড়িয়ে চলুন।
সঠিক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করে ঢলে পড়া রোগ প্রতিরোধ করুন এবং আপনার আলু চাষে লাভবান হোন।
Search
Popular Posts
ধান গাছে থোড় আসার আগে কীটনাশক, ছত্রাকনাশক এবং হরমোন/ভিটামিন স্প্রে করার গুরুত্ব কি?
ধানের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য সঠিক সময়ে পরিচর্যা করা অত্যন্ত জরুরি। বিশেষ করে, থোড় আসার ৭ দিন আগে কীটনাশক, ছত্রাকনাশক এবং হরমোন/ভিটামিন স্প্রে করা হলে গাছের বৃদ্ধি উন্নত হয় এবং ফলন বৃদ্ধি পায়। এখানে থোড় আসার আগে স্প্রে করার কারণ ও প্রয়োজনীয়তা বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো। থোড় আসার আগে স্প্রে করার প্রয়োজনীয়তা ১. রোগ ও পোকার…
সার কী এবং এটি কীভাবে কাজ করে?
১. সার কী এবং এটি কীভাবে কাজ করে? সার হলো উদ্ভিদের পুষ্টি সরবরাহকারী পদার্থ। এটি মাটিতে পুষ্টি যোগ করে, যা গাছ শোষণ করে। নাইট্রোজেন, ফসফরাস ও পটাশিয়ামের মতো উপাদান গাছের বৃদ্ধি, ফলন ও শিকড় শক্তিশালী করে। এটি মাটির উর্বরতা বাড়ায়। ২. প্রাকৃতিক সার ও রাসায়নিক সারের মধ্যে পার্থক্য কী? প্রাকৃতিক সার জৈব উৎস (গোবর, কম্পোস্ট)…
আলু গাছের স্প্রে করার নিয়ম কি কি ?
আলু গাছকে রোগ ও পোকামাকড় থেকে সুরক্ষিত রাখতে স্প্রে করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক নিয়ম মেনে স্প্রে করলে গাছ ভালোভাবে বৃদ্ধি পায় এবং উৎপাদন বাড়ে।স্প্রে করার সঠিক পদ্ধতি:গাছের কান্ড ও পাতা ভিজিয়ে স্প্রে করুন:স্প্রেয়ার ব্যবহার করে এমনভাবে স্প্রে করতে হবে যাতে গাছের প্রতিটি অংশ ভিজে যায়।সকালে বা বিকালে স্প্রে করুন:দিনের ঠান্ডা সময় স্প্রে করা উচিত, যাতে…
Leave a Reply